মোঃ ফারুক হোসেন, নওগাঁ: বদলগাছী উপজেলাতে সাব- রেজিস্ট্রারের ভুয়া স্বাক্ষরে জমির দলিল রেজিস্ট্রি চেষ্টার অভিযোগে আব্দুর রাজ্জাক নামের এক দলিল লেখকের দলিল স্থগিত করা হয় বলে জানা যায়।
গত ১৮ (সেপ্টেম্বর) রবিবার বদলগাছী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এ ঘটনা ঘটে। সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় ও জমির মালিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ ইং সালের ৪২৭৪ নং দলিল মুলে উপজেলার গন্ধর্বপুর গ্রামের আয়েজ উদ্দীন প্রাপ্ত হয়ে দানপত্র একটি দলিলের মাধ্যমে তার স্ত্রীর নামে জমি লিখে দেন।
উক্ত দলিল মুলে আমেনা বেগম তার তিন কন্যা ও এক নাতীর নামে হেবার ঘোষণা দলিল রেজিস্ট্রি দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। আর এ কাজে সহযোগীতা করেন, বদলগাছী সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের দলিল লেখক আব্দুর রাজ্জাক (লাইসেন্স নং-৭৪)।
তিনি বদলগাছী দলিল লেখক সমিতি সদস্য। দলিল লেখক হেবার ঘোষণা দলিল রেজিস্ট্রি করার চেষ্টা করেন। আমেনা বেগমের দলিলে ১৯৭৬ সালের একটি দলিলের রেফারেন্স আছে। উক্ত রেফারেন্স দলিলটি আমেনা বেগমের কাছে না থাকায় দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারছিলেন না। তাই তিনি দলিল লেখক আব্দুর রাজ্জাকের স্মরনাপন্ন হন। দলিল লেখক আব্দুর রাজ্জাক নিজ দায়িত্বে উক্ত দলিলের সার্র্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে।
গত ১৯/০৯/২০২২ইং তারিখ (রবিবার) দুপুরে সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসলে সাব-রেজিস্ট্রার দলিলটি পর্যালোচনা করে দেখেন সার্টিফাইট কপিটি ০৫/০১/২০২২ইং তারিখে সদর সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামান এর স্বাক্ষরিত। অথচ তিনি (মনিরুজ্জামান) উক্ত তারিখের পূর্ব থেকেই এই অফিসে কর্মরত নাই। তাঁর স্বাক্ষরটি জাল মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ করে দেন ।
আমেনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মৃত্যুর আগে আমাকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। আমার বয়স হয়ে গেছে তাই আমি আমার নামীয় জমি তিন মেয়ে ও এক নাতীকে রেজিস্ট্রি করে দিবো। এ বিষয়ে দলিল লেখক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে পরামর্শ করলে তিনি কাগজ পত্র দেখে বলেন, রেফারেন্স একটা দলিল লাগবে। আমি বলি ওটাতো নাই। তখন তিনি বলেন, রেফারেন্স দলিল পাওয়া যাবে তবে টাকা লাগবে।
আমি দলিল লেখক আব্দুর রাজ্জাক কে টাকা দিলে তিনি কাগজ পত্র ঠিক করে দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য আমাকে গত ১৮/০৯/২০২২ইং তারিখ রবিবার অফিসে আসতে বলেন। আমি আমার মেয়ে ও নাতীকে সাথে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে আসি। আমরা সাব-রেজিস্ট্রার সাহেবের কাছে গেলে তিনি কাগজপত্র দেখে রেফারেন্স দলিলটির সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর জাল বলে আমাদেরকে সহ দলিল লেখক আব্দুর রাজ্জাককে আটকে রেখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানা পুলিশকে ফোন করেন। সাথে সাথেই তাঁরা সাবরেজিস্ট্রার অফিসে আসেন।
দলিল লেখক আঃ রাজ্জাক বলেন, আমেনা বেগম তার মেয়ে ও নাতীকে জমি রেজিস্ট্রি করে দিবেন। তাদের দেওয়া কাগজপত্র দেখে আমি দলিল লিখে সাব-রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে নিয়ে যাই। স্যার কাগজপত্র দেখে রেফারেন্স দলিলের সাটিফাইড কপিতে সদর সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জানের স্বাক্ষর জাল বলে দলিলসহ আমাকে আটকে দেন। জাল স্বাক্ষরের বিষয়ে আমেনা বেগম জানেন। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে সাব-রেজিস্ট্রার স্যার আমেনা বেগমের নামে আমাকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তাই আমেনা বেগমের নামে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সাব-রেজিস্ট্রার মাসুদ পারভেজ বলেন, দাখিলকৃত সার্টিফাইড কপিতে নওগাঁ সদর সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জানের স্বাক্ষর জাল প্রমানিত হওয়ায় দলিলটি আটকে দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে আইনী কি পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলিল লেখক রাজ্জাককে মৌখিকভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আর আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে বিষয়টি আমি তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।